রক্তাক্ত ২৪

elekhokUncategorized7 months ago4 Views

আবু সাইদ –
স্বপ্ন কী তার খুব বেশি আছিল? একটা চাকুরি পাইয়া সংসারটা স্বচ্ছলভাবে চালাইতে চাইছিল। বোনের সাধ মিটাইতে হইতে চাইছিল বিসিএস ক্যাডার।
মীর মুগ্ধ –
সময় পাইলেই পাহাড় দেখতে চইলা যাইতো। তার ফেইসবুকে আপলোড করা ছবি আর ভিডিও দেখলেই বোঝা যায় পাহাড়ের প্রতি তার কী ভীষণ মায়া। সময় পাইলেই বাইক নিয়া বন্ধুদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করতো। মুখের হাসির খানা কী! তা-ও নামের মতন মুগ্ধতা ছড়ায়। আর আজ? পাহাড়ের মতন সবার কাছে মাথা উঁচু কইরা চইলা গেল।
জাহিদুজ্জাম তানভীন –
ছেলেটা কী সব যন্ত্রপাতি নিয়াই থাকতো সারাক্ষণ। রোবট বানাইতো, উন্নত ড্রোন বানাইতো। স্বপ্নও পূরণ করতে পারছিল৷ কিন্তু তারপর? বেশিদূর আগাইতে পারে নাই। নতুন কিছু ভাবার আর সময় পায় নাই।
সৈকত –
দুইবোনের কলিজা। বোনের পোস্ট দেইখাই বোঝা যায় বুকের ঠিক কোথায় যাইয়া আঘাতটা লাগছে। তারা নাকি হাসতে ভুইলা গেছে। কী কইরাই বা হাসবো? তাদের আদেরর ‘টুনা’ যে তাদের হাত ফসকাই গেল চিরদিনের লাইগা। ১১ সেপ্টেম্বর ২০ এ পা দিত। কিন্তু ১৯ এ আটকাই গেল। পৃথিবীতে ওর আর বসয় বাড়বে না।
ফারহান ফাইয়াজ-
হাস্যোজ্জ্বল আছিল পোলাটা। ১৮ হয় নাই এখনো। বাচ্চা মানুষ। বন্ধুরা ওরে ধইরা যখন রিক্সায় তুললো হাসপাতালে নেওয়ার লাইগা বারবার ওর রক্ত মাখা শরীরটা ঢইলা পড়তেছিল নিস্তেজ হইয়া।
তাহমিদ –
মাত্র নবম শ্রেণিতে পা দিল। চেহারা থাইকা পিচ্চু ছাপ কাটে নাই এখনো। মায়ের আদরের ছেলে। শান্ত চোখজোড়ায় কত স্বপ্ন! মুখে হালকা হাসি। ওই হাসি মুখটা যখন ব্যথায় কুঁকড়াই উঠলো তখনের বীভৎস চেহারা কী সহ্য করার মতন আছিল?
শেখ আহমেদ শান্ত –
‘যে হৃদয়ে শাহাদাতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা লালন করে
সে হৃদয় কখনো হতাশ হয় না।’ মানুষ কী মরার আগে বুঝে সে ক্যামনে মরবে? কী জানি। কিন্তু শান্ত চাইছিল শাহাদাতি মৃত্যু। খোদায় তারে হতাশ করে নাই। কবুল করছে।
ইরফান ভূঁইয়া –
‘কালকে নামতেছি, এর শেষ না হওয়া পর্যন্ত আছি।’ পোলাটা নামলো। গলা ফাটাই অধিকার চাইলো। তারপর? আর ঘরে ফেলা হইলো না তার। এসবের সব কিছু শেষ হবে কিন্তু ঘরের ছেলে আর কখনো ঘরে ফিরবে না।
শাহনেওয়াজ ফাহাদ-
তার নিথর শরীরটা যখন স্ট্রেচারে তুইলা নিয়া যাওয়া হইছিল তখন পাশে থাকা পোলাপানের কী চিৎকার। একজন তো ফ্লোরে লুটাই পড়লো।
আরো কত্তো… লিখতে গেলে ফুরাইবে না। রক্তের দাগ যে থাইকা যায়।
তারপর অনেকদিন কাইটা যাইবো। মানুষ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হইবো। নিয়ম কইয়া দৌড়াদৌড়ি করতে যাইয়া অনেককিছু ভুলবো। স্মৃতিগুলা, ছবি, ভিডিও সবই থাকবো সবার কাছে। কিন্তু এখনের মতো রক্ত গরম হওয়া ভাব থাকবো না। গায়ে কাটা আর দিবো না। আমাদের জেনারেশনটা কাইটা যাইবো। হয়তো ইতিহাসে ঠাঁই পাইবো “রক্তাক্ত ২৪” নামে। সিনেমা হইবো, নাটক হইবো, কবিরা কবিতা লিখবো, আর ঔপন্যাসিকরা মোটা মোটা উপন্যাস । পরের জেনারেশন ইতিহাস পড়ে জানবো। কিন্তু এখনকার এই যে উত্তেজনা টের পাইবো না। আমরা যেমন মুক্তিযুদ্ধের কথা জানছি আরকি।
কিন্তু এই যে যারা জীবন হারাইলো, মায়ের বুক খালি হইলো ওই বুক আর ভরবো না। মায়েরা জানবে এবং বুঝবে এদেশে অধিকার পাইতে হইলে নিজের কোলের ছেলেরে বিসর্জন দিতেই হয়। এটাই এদেশের নিয়ম, এটাই আইন। এভাবেই চলে আসছে, চলছে এবং চলবে।

Leave a reply

Recent Comments

No comments to show.
Join Us
  • Facebook38.5K
  • X Network32.1K
  • Behance56.2K
  • Instagram18.9K

Stay Informed With the Latest & Most Important News

I consent to receive newsletter via email. For further information, please review our Privacy Policy

Categories

Advertisement

Loading Next Post...
Sign In/Sign Up Search Trending Add a post 0 Cart
Popular Now
Loading

Signing-in 3 seconds...

Signing-up 3 seconds...

Cart
Cart updating

ShopYour cart is currently is empty. You could visit our shop and start shopping.